নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ কোনো প্রকার আইন-কানুন না মেনেই বরিশাল নগরীর অলিগলিতে অবাধে গড়ে উঠেছে লাইসেন্সবিহীন অবৈধ জ্বালানি তেলের দোকান। অতিরিক্ত লাভের আশায় নগরীর বিভিন্ন স্থানে এসব দোকান দিনদিন বৃদ্ধি পেলেও প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। রাস্তার পাশে নানা স্থানে চোরাই তেল বেচাকেনার দোকান বৃদ্ধি পাওয়ায় নানা সমস্যায় পড়েছেন বৈধ ব্যবসায়ীরাও। প্রতিদিন তেমনি চোখে পড়ে, বরিশাল নগরীর চাঁদমারী এলাকার বটগাছ সংলগ্ন মেসার্স শাহানাজ ট্রেডার্স’র মালিক জাকিরের তেল চুরির জমজমাট বানিজ্য। তার সাথে রয়েছে বরিশালের বিভিন্ন ডাক্তারের গাড়ী চালকরা ও সরকারী-বেসকারী বিভিন্ন প্রতিষ্টানের গাড়ীর চালকদের তেল চোরাকারবারীদের যোগসাজশ।
দুপুর ও রাত পার্কিং করা সরকারী-বেসরকারী গাড়ি। আর সেই গাড়ী থেকে চলে তেল চুরি। গাড়িগুলো থেকে এভাবে জ্বালানি তেল চুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় লাভের চেয়ে লোকসানের ঘানি টানছে সরকার ও বেসকারী গাড়ির মালিকরা। কয়েকজন গাড়ির মালিক জানান, মহাসড়ক ও বরিশাল নগরীর চাঁদমারিতে রয়েছে এসব অবৈধ তেলের দোকান। সামনে ঝুপড়ির মতো ছোট্ট একটি দোকান থাকে, কিন্তু পেছনে থাকে অনেক প্রকার ড্রাম। তেল চুরির পাইপসহ নানান সরঞ্জামই এই ব্যবসার পুঁজি। রাস্তার পাশে ওদের চোরাই সিগন্যাল হিসেবে একটি ড্রাম থাকে শুধুমাত্র। যারা চুরি করে তেল বিক্রি করবে ওরাই ওদের চেনে। গাড়ি থামাতেই ইশারায় কথা সেরে দ্রুত গাড়ী থেকে জাকিরের কাছে চুরিকৃত পেট্রোল অথবা আক্টেন তেল বিক্রি করে চলে যায়।
জাকিরের টার্গেট ভিআইপিদের গাড়ী অথবা সরকারীগাড়ীগুলো। এছাড়া তেল চুরির কারণে তেল সরবরাহকারী পদ্মা, মেঘনা, যমুনা অয়েল কোম্পানিসহ জ্বালানি খাতে ব্যাপক খরচ গুনতে হচ্ছে একাধিক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে। আবার একই সাথে অবৈধ দোকানের ভেজাল মিশ্রিত তেল-মবিল ব্যবহারের ফলে ইঞ্জিনে নানা ত্রুটি দেখা দেয় বলে জানান তারা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল নগরীর মেসার্স শাহানাজ ট্রেডার্স’র নামে একটি দোকান খুলে র্দীঘ দিন ধরে জাকির চেরাই তেল বেচা-কেনার একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। বরিশাল শহরের বিভিন্ন জায়গায় জাকিরের চোরাই তেল সরবারহ করা হয়। কিছুদিন আগে চোরাই তেল পেট্রোল কিনে জাকির তার মধ্যে ডিজেল মিশানোর সময় পুলিশের হাতে আটক হয়ে জেল খেটে আসে। তার পরেও থেকে নেই তার তেল চুরির বানিজ্য।
চাঁদমারীর এলাকার এক ব্যাবসায়ী বলেন,জাকির দোকান খুলেই সামনে দাড়িয়ে থাকে সরকারী-বেসরকারী গাড়ী গুলো থামানোর টার্গেট নিয়ে। সূত্রে আরো জানা গেছে,স্থানীয় প্রশাসন ও কিছু সাংবাদিকদের ম্যানেজ করেই বছরের পর বছর চলছে তার তেল চুরির সিন্ডিকেট। গাড়ী থেকে জাকিরের চোরা তেল নামানোর স্পট হলো, দোকানের সামনে পাম গাছের আড়ালে, রাস্তার বিপরীতে ব্যাপ্টিশমিশন স্কুলের গেডের সামনে অথবা স্টিডিয়ামের মাঠে মধ্যে। জাকির চোরা তেল কেনা বেচা করে নগরীরর কালুশাহর সড়ক এবং গড়িয়ার পার এলাকায় জমি কিনেছে। বিভিন্ন তেলের পাম্পে জ্বালানি তেল গাড়ীর চালকের যোগসাজশে চোর সিন্ডিকেট মালিকের অগোচরে তেল চুরি করে ড্রাম ভর্তি করে দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে জাকিরের কাছে বিক্রি করে আসছে।
তথ্যে জানা যায়, জাকিকরের চোরাই তেলের অবৈধ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে স্ব স্ব এলাকার কিছু স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র। অবৈধভাবে গড়ে উঠা তেল ব্যবসার দ্বারা অপরাধ বৃদ্ধি পেলেও প্রশাসনের কোনো ভূমিকা নেই। ফলে অবৈধ ব্যবসা পরিচালনায় কোনো আইন-কানুনের তোয়াক্কা করছে না জাকির। জাকির ছাড়াও ঐএলাকা গড়ে উঠেছে চোরাই তেলের জমজমাট ব্যবসা।
একটি সূত্রে জানা গেছে,চালকরা চুরি করে জাকিরের কাছে পেট্রোল প্রতি লিটার বিক্রি করেন ৭০ টাকা করে। আর জাকির তা পাইকারী হিসেবে বিক্রি করে ৮৫ টাকা লিটার। খুচরা বিক্রি করেন ৯০ টাকা লিটার। ৩ জুন বুধবার সকাল ৯ টার দিকে প্রতিবেদকের ক্যামেরায় ধরা পড়েন,সরকারী একটি গাড়ীর ছবি। দূর থেকে প্রতিবেদক দেখে প্রথমে বুঝতে পায়নি। পরে দোকানেরর সামনে গিয়ে দেখতে পায় জনপ্রশাসন মন্ত্রলনার (ঢাকা ১৪৮/শ) নতুন একটি কালো গাড়ী থেকে জাকির ও গাড়ীর চালক পাইব দিয়ে তেল নামাচ্ছে। বিষয়টি চালকের কাছে জানতে চাইলে চালক গাড়ীটি টেনে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে পালিয়ে যান।
পরে জাকিরের কাছে জানতে চাইলে জাকির বলেন, ভাই আমি এখানে চোরা তেল কেনা বেচা করি তা সবাই জানে। আপনাদের অনেক সাংবাদিকও জানে আমার চোরা তেলের ব্যাবসার কথা। তারা আমার কাছ থেকে তেলও নেয়। তিনি আরো বলেন,আমি চোরা তেল কিনি এটা নতুন নয়। আপনার সমস্যা কি বলেন। আপনি পত্রিকায় লেখেন তাতে আমার কিছুই হবেনা। আমি সবাইকে ম্যানেজ করেই ব্যাবসা চালিয়ে আসছি বছরের পর বছর।
Leave a Reply